পুনেতে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে অপরাজিত থাকা ভারত টানা চতুর্থ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামে।
যেখানে, অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে ছাড়া আবারও জয়ের ধারায় ফিরতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ দল। সাকিবের পাশাপাশি একাদশ হতে বাদ পড়েন তাসকিন আহমেদ। তাদের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পান নাসুম আহমেদ ও হাসান মাহমুদ।
ইনজুরিতে থাকা দলের নিয়মিত অধিনায়ক সাকিবের অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পুনেতে টসে জিতে স্বাগতিক দলকে আগে বোলিংয়ে পাঠান এই ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।
বাংলাদেশ একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, তানজিদ হাসান তামিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুশফিকুর রহিম, তাওহীদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান।
ভারত একাদশ: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া, রবিন্দ্র জাদেজা, শার্দূল ঠাকুর, কুলদীপ যাদব, জসপ্রীত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ।
ম্যাচের ১ম ইনিংস
পুনের ব্যাটিং সহায়ক মাঠে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরু করেন এবারের বিশ্বকাপে ওপেনিংয়ের দুই নিয়মিত মুখ লিটন দাস ও তানজিদ তামিম।
লিটন দাসকে সাথে নিয়ে প্রথম থেকেই ভারতীয় বোলারদের দেখেশুনে খেলতে থাকেন জুনিয়র তামিম। প্রথম ৩ ম্যাচে ওপেনিংয়ে ব্যর্থ হলেও এই ম্যাচে ভালো কিছু করার আভাস দেন এই তরুণ ওপেনার।
অভিজ্ঞ লিটন দাসও তার সঙ্গ দিচ্ছিলেন সঠিকভাবে। দুইজনের অসাধারণ ব্যাটিং পার্ফম্যান্সে প্রথম পাওয়ার প্লে শেষে ৬৩ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। ৪১ বলে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান তামিম।
হাফ সেঞ্চুরি তুলে পরের ওভারেই কুলদীপ যাদবের কাছে কাঁটা পড়েন তিনি। এরপর, ক্রিসে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সাকিবের পরিবর্তে দলের দায়িত্ব নেওয়াই বাড়তি চাপ সামলাতে ব্যর্থ হন শান্ত।
বিশ্বকাপে নিজের অফ ফর্ম বজায় রেখে জাদেজার এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ক্রিস ছাড়েন তিনি। অপরপ্রান্তে, তানজিদ তামিমের পর নিজেও অর্ধ শতকের দেখা পান লিটন।
শান্তর পর ব্যাটিংয়ে এসে অধিনায়কের দেখানো পথে হাঁটেন মিরাজ। মাত্র ৩ রান নিয়ে সিরাজকে উইকেট উপহার দেন দলের এই অন্যতম ভরসার নাম। দলের টপ অর্ডারের আসা যাওয়ার মধ্যে একপ্রান্ত ঠিকই ধরে রেখেছিলেন লিটন।
দলীয় ১৩৭ রানে নিজের ৬৬ রানের ইনিংসের ইতি টানেন রবিন্দ্র জাদেজার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে। মুশফিককে সাথে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে ভালো সমাপ্তির আশা দেখিয়েও বিফল হন তাওহীদ হৃদয়।
পরে, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সাথে নিয়ে দলের হয়ে শেষ চেষ্টা করেন মুশফিক। মিস্টার ডিপেন্ডেবল ৩৮ রানে ফিরলেও দলের আস্থার প্রতিদান ঠিকই দেন রিয়াদ।
শেষে রিয়াদের অনবদ্য ৪৬ রানের ইনিংসের পাশাপাশি নাসুমের ১৪ রানের উপর ভর করে ভারতের সামনে ২৫৭ রানের টার্গেট দাঁড় করায় হাথুরুসিংহের শিষ্যরা।
ম্যাচের ২য় ইনিংস
২৫৭ রানের মাঝারি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চার-ছক্কা দিয়ে ইনিংসের শুরুটা করেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন আরেক ওপেনার শুভমান গিল।
দুজনের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে প্রথম পাওয়ার প্লে’তেই ৬৩ রান করে মেন ইন ব্লু’রা। ৪৮ রান করা রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম উইকেটের দেখা পান পেসার হাসান মাহমুদ।
রোহিত হাফ সেঞ্চুরির দেখা না পেলেও ঠিকই বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটির দেখা পান শুভমান গিল। ফিফটি তুলেই পরের ওভারে ৫৩ রান করে মিরাজের কাছে উইকেট হারিয়ে বসেন গিল।
এরপর, দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভুল করেননি বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ার। আইয়ারকে সাথে নিয়ে ওয়ানডেতে নিজের ক্যারিয়ারের ৬৯তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন “রান মেশিন” খ্যাত এই তারকা। মাঝে ১৯ রান করে শ্রেয়াস আইয়ার ফিরলেও দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে ভুল করেননি বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল।
লোকেশ রাহুলের ৩৪ ও বিরাট কোহলির শেষ বলের ছক্কায় তুলে নেওয়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনালের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে যায় ২০১১ সালের চ্যাম্পিয়নরা।
৯৭ বল খরচ করে ১০৩ রানের অপরাজিত দুর্দান্ত ইনিংসে দলের জয়ে অবদান রাখায় ম্যাচ সেরা হয়েছেন বিরাট কোহলি।
ম্যাচ স্কোরবোর্ড (Match Scoreboard)
বাংলাদেশ ২৫৬/০৮ (৫০ ওভার)
লিটন কুমার দাস – ৬৬ (৮২)
রবিন্দ্র জাদেজা – ২/৩৮ (১০ ওভার)
ভারত ২৬১/০৩ (৪১.৩ ওভার)
বিরাট কোহলি – ১০৩* (৯৭)
মেহেদী হাসান মিরাজ – ২/৪৭ (১০ ওভার)
ম্যাচ সেরা: বিরাট কোহলি
- Get free Tourist Guide Tips from Experts