১০ জুন ২০২৫, ঢাকা — এশিয়ান কাপ ২০২৭ কোয়ালিফায়ার ম্যাচে আজ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে মাঠে নামে বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দল। দেশের মাটিতে হাজারো দর্শকের সামনে খেলার সুযোগ থাকলেও কাঙ্ক্ষিত ফল নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি লাল-সবুজের যোদ্ধারা। ম্যাচে শুরুতে কিছুটা ভালো খেললেও শেষমেশ সিঙ্গাপুরের কাছে ১–২ ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ।
প্রথমার্ধের খেলায় উত্তেজনা, কিন্তু ভুলের খেসারত
খেলার শুরু থেকেই দুই দলই মাঠে আক্রমণাত্মক মেজাজে নামে। বাংলাদেশ দল প্রথম ৩০ মিনিটে মাঝমাঠের দখল বেশ ভালোভাবে রাখতে সক্ষম হয়। হামজা চৌধুরী এবং শমিত শোমে মিলিয়ে দারুণ পাসিং মুভমেন্ট গড়ে তোলেন। তবে প্রথম গোলটি আসে একটি ভুলের কারণে।
৪৫ মিনিটে বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল মারমা একটি সহজ বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। সিঙ্গাপুরের Song Ui-young সেই সুযোগে বল ছিনিয়ে নিয়ে গোলে পাঠান। ফলে প্রথমার্ধ শেষ হয় ০–১ ব্যবধানে।
দ্বিতীয়ার্ধে গোল বাড়ায় সিঙ্গাপুর, প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করে বাংলাদেশ
দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ আক্রমণে আরও বেশি মনোযোগী হয়। তবে ডিফেন্সে ছিলো কিছু বিশৃঙ্খলা। ৫৮ মিনিটে সেই সুযোগে সিঙ্গাপুরের Ikhsan Fandi জোড়ালো শটে গোল করে দলকে ২–০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন।
এরপর ম্যাচে কিছু পরিবর্তন আনা হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। স্ট্রাইকার হিসেবে মাঠে আসেন তৌহিদুল ইসলাম, যিনি দ্রুত গতি নিয়ে খেলার গতিপথ পাল্টাতে চেষ্টা করেন। ৬৭ মিনিটে রাকিব হোসেন দারুণ এক কনভার্শন করে একটি গোল শোধ করেন। গোলটি আসে হামজা চৌধুরীর পাস থেকে।
শেষ মুহূর্তের নাটক, কিন্তু গোল শোধ অসম্পূর্ণ
ম্যাচের শেষ ২০ মিনিটে বাংলাদেশ একাধিক আক্রমণ চালায়। সবচেয়ে বড় সুযোগ আসে ৮৮ মিনিটে, যখন তারিক কাজী হেড করে বল পোস্টে মারেন। যদি বলটি গোলে যেত, তাহলে ম্যাচটি সমতায় আসত।
শেষ মুহূর্তের অতিরিক্ত সময়েও বাংলাদেশ দুটি কর্নার পায়, তবে কোনোটিতেই ফল আসেনি। সিঙ্গাপুরের রক্ষণভাগ ছিল সুশৃঙ্খল এবং ধৈর্যশীল।
ম্যাচ পরিসংখ্যান
- বাংলাদেশ: ১
- সিঙ্গাপুর: ২
- গোলদাতা: রাকিব হোসেন (বাংলাদেশ), Song Ui-young, Ikhsan Fandi (সিঙ্গাপুর)
- বলের দখল: বাংলাদেশ – ৪৭%, সিঙ্গাপুর – ৫৩%
- কর্নার কিক: বাংলাদেশ – ৫, সিঙ্গাপুর – ৩
- ফাউল: বাংলাদেশ – ১২, সিঙ্গাপুর – ৮
- ইয়েলো কার্ড: বাংলাদেশ – ১, সিঙ্গাপুর – ১
কোচের প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
ম্যাচ শেষে কোচ জাভিয়ের কাবরেরা বলেন, “আমরা কিছু জায়গায় ভালো খেলেছি, কিন্তু প্রতিপক্ষের সামনের লাইনের সাথে তাল মিলিয়ে পারিনি। আমাদের ডিফেন্সে কিছু ভুল হয়েছে, যেগুলোর জন্য আমরা মূল্য দিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “এই দলটির মধ্যে ট্যালেন্ট আছে, কিন্তু আমাদের আরও প্র্যাকটিস দরকার, বিশেষ করে প্রেসার মুহূর্তে কেমন খেলতে হয় তা শিখতে হবে।”
দর্শক ও মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া
ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উপস্থিত প্রায় ২০ হাজার দর্শক অনেকটা হতাশ হয়ে মাঠ ছাড়েন। যদিও শেষদিকে গোল করার পর কিছুটা আশা জেগেছিল, কিন্তু তা আর পূরণ হয়নি।
সামাজিক মাধ্যমে ভক্তদের অনেকেই বলেন, “দল ভালো করেছে কিন্তু ফিনিশিং এবং গোলকিপিং-এ সমস্যা স্পষ্ট।”
আরও কেউ কেউ বলছেন, “হামজা চৌধুরী ও শমিত শোমের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় থাকলেও দলীয় সমন্বয় কম ছিল।”
পরবর্তী ম্যাচ ও পরিকল্পনা
এই পরাজয়ের পর গ্রুপ টেবিলে বাংলাদেশ এখন তৃতীয় স্থানে রয়েছে মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে। সামনের ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে ভারত। সেই ম্যাচে জয় পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, না হলে কোয়ালিফায়ারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
কোচিং স্টাফ এবং ফেডারেশনের উচিত এই সময়ে দলকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা এবং যতটা সম্ভব ট্যাকটিক্যালভাবে উন্নয়ন সাধন করা।
উপসংহার
আজকের পরাজয় যতটা হতাশার, ঠিক ততটাই শেখার সুযোগ। বাংলাদেশ দল বেশ কয়েকটি ইতিবাচক মুহূর্ত তৈরি করেছে — যা ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক। তবে, ফুটবলের মতো দ্রুতগতির খেলায় এক মুহূর্তের ভুলই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়। তাই ভুলগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত ঠিক করাটাই এখন সবচেয়ে বড় কাজ।
বাংলাদেশের ফুটবলে টেকসই উন্নয়ন আনতে হলে মাঠের ভেতরে ও বাইরে আরও পরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে।
লিখেছেন: HealthD Sports Desk
তারিখ: ১০ জুন, ২০২৫