BAN vs AFGক্রিকেটখেলাধুলা

২০২৫ এশিয়া কাপ: বাঁচা-মরার লড়াইয়ে বাংলাদেশের শ্বাসরুদ্ধকর জয়

ক্রিকেট মাঠে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ মানেই এক ভিন্ন উত্তেজনা, স্নায়ুচাপ এবং রোমাঞ্চের ছড়াছড়ি। এশিয়া কাপ ২০২৫-এর গ্রুপ পর্বে এই দুই দলের মুখোমুখি হওয়াটা তাই আরও বেশি আকর্ষণীয় ছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য, কারণ শ্রীলঙ্কার কাছে আগের ম্যাচে হতাশা ভরা হারের পর এই ম্যাচটা ছিল তাদের জন্য এক প্রকার ‘ডু অর ডাই’ পরিস্থিতি। সুপার ফোরে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে এই ম্যাচে জয় ছিল বাধ্যতামূলক। অন্যদিকে, আফগানিস্তানও চাইছিল নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে। এমন এক হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে শেষ পর্যন্ত হাসি ফুটেছে বাংলাদেশের মুখে। শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াইয়ে ৮ রানের জয়ে এশিয়া কাপে টিকে থাকার আশা বাঁচিয়ে রাখলো টাইগাররা।

বাঁচা-মরার লড়াইয়ের প্রেক্ষাপট

২০২৫ এশিয়া কাপের গ্রুপ ‘বি’-তে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা একে অপরের প্রতিপক্ষ। প্রথম ম্যাচে হংকংকে হারিয়ে দারুণ সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরের ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বসে। ওই ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ভঙ্গুরতা প্রকট হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, আফগানিস্তানও নিজেদের শক্তি প্রমাণ করতে মরিয়া ছিল। তাই এই ম্যাচটি শুধু একটি ক্রিকেট ম্যাচ ছিল না, ছিল দুই দলের মানসিক দৃঢ়তা এবং কৌশলগত দক্ষতার এক কঠিন পরীক্ষা।

প্রথম ইনিংস: ব্যাটিংয়ে উত্থান-পতনের গল্প

টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর এই সিদ্ধান্তটা ছিল বেশ সাহসী। তবে, শুরুটা ভালোই করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম এবং লিটন দাস। তারা প্রথম উইকেটে ৬৩ রানের কার্যকরী জুটি গড়েন। এই জুটিতেই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন তানজিদ হাসান তামিম। তার ৩১ বলে ৫২ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস, যেখানে ছিল ৪টি চার এবং ৫টি ছক্কা, দলের রানের গতিকে অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু লিটন দাস (৯) দ্রুত আউট হলে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর সাইফ হাসান (৩০) এবং তাওহীদ হৃদয় (২৬) কিছু কার্যকরী ইনিংস খেললেও তাদের স্ট্রাইক রেট ছিল কিছুটা মন্থর। দলের মিডল অর্ডারের ব্যাটিংয়ে সেই ধারাবাহিকতা এবং পাওয়ার হিটিংয়ের অভাব চোখে পড়ে। ১৫৪ রানের টার্গেটটা কিছুটা কম মনে হলেও, এই টার্গেটকে ডিফেন্ড করার জন্য বোলারদের ওপরই সব দায় বর্তায়। আফগানিস্তানের হয়ে অধিনায়ক রশিদ খান এবং নূর আহমেদ দুজনেই দুটি করে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের রানের গতিতে লাগাম টানেন।

দ্বিতীয় ইনিংস: বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স

১৫৫ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে আফগানিস্তান শুরুতেই হোঁচট খায়। বাংলাদেশের বোলাররা প্রথম থেকেই চেপে ধরেন। আফগানদের ওপেনিং জুটি দাঁড়াতেই পারেনি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে তারা। বিশেষ করে, বাংলাদেশের স্পিনাররা দারুণ বুদ্ধিমত্তা দেখান। নাসুম আহমেদ আফগান টপ অর্ডারকে নাস্তানাবুদ করে দেন এবং তার স্পিনে একের পর এক উইকেট হারায় আফগানিস্তান। নাসুম আহমেদ মাত্র ১১ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন, যা দলের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে, লড়াই শেষ হয়ে যায়নি। আফগানিস্তানের মিডল অর্ডারে আজমতউল্লাহ ওমরজাই (৩০) এবং শেষ দিকে রশিদ খানের (২০) কার্যকর ইনিংস দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যায়। ম্যাচের শেষ ওভার পর্যন্ত উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। আফগানিস্তানের হাতে ছিল ৩ উইকেট, এবং তাদের প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। এমন অবস্থায় মুস্তাফিজুর রহমান বল করতে এসে একাই দুই উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন। তিনি ৩ উইকেট নেন মাত্র ২৮ রান দিয়ে। নাসুমের বোলিংয়ের পর মুস্তাফিজের এই শেষ ওভারের জাদু বাংলাদেশকে এক অসাধারণ জয় এনে দেয়। নাসুম আহমেদ তার অসাধারণ বোলিংয়ের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কারও লাভ করেন।

জয় পরবর্তী বিশ্লেষণ: বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

এই জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে স্বস্তি এনেছে। তবে, এই জয় থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নেওয়াও প্রয়োজন।

ব্যাটিংয়ের দুর্বলতা:

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতার অভাব এখনও বড় সমস্যা। তানজিদ তামিম দুর্দান্ত ইনিংস খেললেও মিডল অর্ডারে একজন বড় রান করার মতো ব্যাটসম্যানের অভাব ছিল। টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার হিটিংয়ের অভাবও চোখে পড়ে। ১৫৪ রান ডিফেন্ড করা গেলেও, যদি পিচ আরও ব্যাটিং-বান্ধব হতো, তাহলে এই রানটা যথেষ্ট নাও হতে পারতো। ভবিষ্যতে এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হলে মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের আরও বেশি আগ্রাসী হতে হবে।

বোলারদের দৃঢ়তা:

এই ম্যাচে বোলাররাই বাংলাদেশের ত্রাতা হয়ে এসেছেন। বিশেষ করে, চাপের মুখে নাসুম আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান এবং রিশাদ হোসেনের (১৮ রানে ২ উইকেট) পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা শুধু উইকেটই নেননি, বরং রানের গতিতেও লাগাম টেনে ধরেছিলেন।

ম্যাচ জয় এবং সুপার ফোরের সমীকরণ:

এই জয়ের ফলে বাংলাদেশ এখনও এশিয়া কাপে টিকে আছে। সুপার ফোরে যাওয়ার জন্য তাদের এখন তাকিয়ে থাকতে হবে শ্রীলঙ্কা বনাম আফগানিস্তান ম্যাচের দিকে। যদি শ্রীলঙ্কা ওই ম্যাচে জয়ী হয়, তাহলে বাংলাদেশের সুপার ফোরে যাওয়ার সুযোগ বাড়বে।

পরিশেষে বলা যায়, এই জয় বাংলাদেশের জন্য এক নতুন আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর এই জয় ছিল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে, এই টুর্নামেন্টের বাকি পথটা বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে না। এই জয়ের অনুপ্রেরণা নিয়ে দল যদি নিজেদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারে, তাহলে এশিয়া কাপে তাদের পারফরম্যান্স আরও ভালো হতে পারে।

profile picture

Tools

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *