কেন হারলো আর্জেন্টিনা? জানুন মাঠের বাইরের ও ভেতরের গল্প!
বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নেমেছিলো যে দল, সে দলটি কেন মিডিওকোর সৌদি আরবের কাছে পাত্তায় পেলো না? কী হয়েছিলো মাঠে? শুধুই কী অফসাইড ব্যর্থতা! নাকি অন্যকিছু! কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে হেলদি-স্পোর্টস।
কেন হারলো আর্জেন্টিনা
মরুর বুকে বজ্রপাত দেখলো বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার আর্জেন্টিনা। পরের রাউন্ডে যাবার লড়াইয়ে শুরুতেই খেলো সৌদি ধাক্কা। চলুন জেনে নিই, কেন এমন হার নীল আকাশীদের।
১. রেনার্দ ট্যাকটিক
সৌদি কোচ হার্ভ রেনার্দ ম্যাচের আগে প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলেন, “আমরা এখানে পিকনিক করতে আসিনি।” শুধু মুখেই নয়, মাঠেও করে দেখিয়েছেন তিনি।
ম্যাচের প্রথমার্ধে এক অদৃশ্য জ্যামিতিক ছকে ডিফেন্ডার্স সাজিয়েছিলেন হার্ভ। ৪ ডিফেন্ডার দিয়ে গড়া সৌদি ডিফেন্স যেন মরুর বুকে উঁচু বালুস্তর; যা ভেদ করা আকাশী-নীল মুসাফিরদের জন্য ছিলো সীমাহীন মরিচীকা। এক অদৃশ্য রেখা যেন আটকে রেখেছিলো মেসি, ডিমারিয়া-দের। যত বারই তারা সেই রেখা ক্রস করেছেন, পড়েছেন অফ-সাইডের ফাঁদে।
২. সৌদি ফাঁদ
সলিড ডিফেন্সের পাশাপাশি আরেকটি যে ফাঁদ পেতেছিলো মরুর সৈনিকেরা তা কেবল কার্যকরই নয়, ঝুকিপূর্ণও বটে। লাইভ খেলাতে যা আপনার চোখে পড়েনি তা আপনি দেখতে পাবেন অবসরে হাইলাইটস দেখার সময়ে।
আপনি দেখবেন যখনই লং পাশে আর্জেন্টাইন প্লেয়াররা সৌদির রক্ষণভাগে ঢুকেছে তখন পিছ থেকে কোনো সৌদি প্লেয়ার তাকে চেজ করেনি। এটা ছিলো বিপরীত প্লেয়ারদের অফসাইডের ফাঁদে ফেলার এক ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে আমরা জার্মানিকে ঠিক একই কৌশল প্রণয়ন করতে দেখেছিলাম।
৩. চেঞ্জ অব প্ল্যান
আকাশচুম্বী আকাঙ্ক্ষার পরও যখন মাত্র ১-০ তে এগিয়ে মাঠ ছেড়েছে ম্যারাডোনার শিষ্যরা, তখন স্কোরবোর্ডে এগিয়ে থাকার পরও মনোবলে পিছিয়ে ছিলো দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি। আর এরই সুযোগ নিয়ে পালটা আক্রমণ সাজিয়েছে মাস্টারমাইন্ড রেনার্দ।
হাফ টাইমের পর আর্জেন্টিনা যখন আরো বেশি গোল করার জন্য মুখিয়ে ঠিক তখনই কাউন্টার এটাক সৌদি প্লেয়ারদের। ফলাফল ৫ মিনিটের ব্যবধানে গোটা ২ গোল।
৪. রোবটিক অফসাইড
অফসাইডের ভুলভ্রান্তি নিরূপণে টেকনোলজির ব্যবহার এবারই প্রথম। কনুই বা হাটুর সামান্য অংশ যেখানে গড়ে দিচ্ছে বড় ব্যবধান। যেগুলো অফসাইড হিসেবে এর আগে কখনো ধরা পড়েনি তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে লুসেল স্টেডিয়ামের ফুটবল ড্যান্সে। ফলাফল, পরপর ৩টি অফসাইড এবং মনোবলে এক অদৃশ্য ধাক্কা।
টেকনোলজির অযুহাত নয়, তবে এই ৩টি গোল না পাওয়ায় আর্জেন্টিনার প্লেয়াররা যে মানসিকভাবে এক সূক্ষ্ম চাপ অনুভব করেছিলেন তা আপনি অস্বীকার করবেন কীভাবে?
৫. পাহাড়সম আকাঙ্ক্ষা
সৌদি আরবের সাথে আর্জেন্টিনা যে হেসে খেলেই জিতবে তা একরকম পরিমেয় ছিলো। কিন্তু মাঠের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই এই আকাংক্ষা কেবল নড়বড়েই করেনি, বরং তৈরি করেছিলো এক অনাবৃত কালো চাপ। যে চাপ বড় দলগুলো হরহামেশাই অনুভব করে থাকে ছোট দলগুলোর সাথে খেলার সময়। যা ডেকে নিয়ে আনে আকষ্মিক অঘটন ও আপেক্ষিক আলোড়ন।
এতসব মিলিয়ে শুধু হারের স্বাদই পেলো না ইউরোপীয়ান লীগ দাপিয়ে বেড়ানো আর্জেন্টাইন প্লেয়াররা, বরং পেলো ব্রাজিল সমর্থকদের অগণিত লাঞ্চনা। এখন দলটির লক্ষ বাকি ম্যাচগুলোই ভালোভাবে ফিরে আসা ঠিক যেভাবে পাকিস্তান ফিরে আসে আইসিসির সাজানো ওয়ার্ল্ডকাপে।
লিখেছেন- Ariful Abir
